Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ধান উৎপাদনে বোরো আবাদে করণীয়

ড. মো. শাহজাহান কবীর১ কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন২

ধান উৎপাদনে বোরো মওসুম সর্বাধিক উৎপাদনশীল। একথা অনস্বীকার্য বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়েছে। দেশের মোট উৎপাদনের ৫৮ ভাগ আসে এ মওসুম থেকে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বোরো ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫ থেকে ২.০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব যা জাতীয় উৎপাদনে বিশাল ভুমিকা রাখতে পারে। স্বাধীনতার পর পরই সদ্য স্বাধীন দেশের ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক আমদানির মাধ্যমে এবং স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেন এবং কৃষি ঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাসজমি বিতরণ করে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘একটা স্বল্প সম্পদের দেশে কৃষি খাতে অনবরত উৎপাদন হ্রাসের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে না। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। চাষিদের ন্যায্য ও স্থিতিশীল মূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’ তিনি কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেন, উচ্চতর কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য ১৯৭৩ সালের মধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি-অবকাঠামো পুনর্নিমাণ ও কৃষি-যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে ৪০ হাজারটি শক্তিচালিত লো-লিফট পাম্প, ২৯০০টি গভীর নলকূপ ও ৩০০০টি অগভীর নলক‚প স্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশে বোরো আবাদ বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এক সময় দেশের বোরোর আবাদ কম হলেও সেচব্যবস্থা প্রবর্তনের সাথে সাথে আবাদ বাড়তে থাকে। এর সাথে যোগ হতে থাকে অব্যাহতভাবে ফলন বৃদ্ধির নতুন নতুন উন্নতর জাত। ফলশ্রুতিতে উৎপাদনের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বোরো ক্রমে প্রথম অবস্থানে উঠে আসে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরো সুদৃঢ় করেছে এবং করছে।


বোরো ধান নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা আছে যে, এক কেজি ধান উৎপাদন করতে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি লাগে। কিন্তু ব্রি ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কর্তৃক এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, সেচের পানির হিসেবে কৃষকপর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে ১২০০-১৫০০ লিটার পানি লাগে। অপচয় বাদ দিয়ে শুধু ধানের উৎপাদনে প্রকৃত পানির খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে ৫৫০-৬৫০ লিটার পানিই যথেষ্ট। বোরো আবাদ বাড়ানোর জন্য এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা, বিপরীতে জনসচেতনতা গড়ে তোলার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি বোরো চাষে পানির অপচয় রোধে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।


আরেকটি নেতিবাচক প্রচারণা আছে, বোরো চাষে কৃষকের লোকসান হয় কিন্তু ২০০১-২০১৯ পর্যন্ত গত ১৯ বছরের বোরো ধান চাষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কৃষকরা বোরো ধান চাষ করে প্রতি বছর হেক্টরপ্রতি গড়ে ৫০২ টাকা হারে লাভ করছেন। যদিও কোন কোন বছরে লাভের তারতম্য আছে, কিন্তু কৃষকরা সাধারণত বোরো ধান অর্থকরী ফসল (Cash Crop) হিসেবে চাষ করেন। যা তারা প্রয়োজনমাফিক বিক্রি করে দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। কৃষকদের আয়ের একটি বড় অংশ বোরো ধান থেকে আসে। যদি বোরো ধান চাষ না করা হয় তাহলে কৃষকের আয় অনেকাংশে কমে যাবে এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বোরো ধান চাষ অত্যন্ত জরুরি।


এ বছর অতি বৃষ্টিতে ছয় দফা বন্যায় ৩৫টি জেলার আমন ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কার নেই বরং সারাবছরের উৎপাদন বিবেচনা করলে আগামী জুন পর্যন্ত দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৩০ লক্ষ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এ বিষয়ে গত এক মাস ধরে দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলে কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মী, এনজিও, মিলার ও ভোক্তাপর্যায়ে জরিপ করে এই তথ্য পেয়েছে ব্রি। এই প্রথম উৎপাদন নির্ণয়ের জন্য স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে ফলন ও উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সুতরাং সারা দেশে চালের উৎপাদন কম এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশংকার কথা যেভাবে ফলাওভাবে প্রচার করা হচ্ছে তা আদৌ ঠিক নয়।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীকে বোরোর উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বোরোর চাষযোগ্য কোনো জমি যাতে খালি না থাকে সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার কথা বলেছেন। বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদন শীলতা বাড়াতে মাঠ থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সব কর্মকর্তাকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহŸান জানিয়ে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, “যে করেই হোক চলতি বোরোর যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা অর্জন করতে হবে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষকের পাশে থাকতে হবে। এমনিতেই এ বছর ধানের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুশি ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় আছে। অন্যদিকে আমরা কৃষকদের যে বোরো ধানের উন্নত বীজ, সার, সেচসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় যে প্রণোদনা দিচ্ছি তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে”।


এরই প্রেক্ষিতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী মওসুমে বোরো ধানের আবাদ ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানো হবে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে চাষযোগ্য কোনো জমি খালি না থাকে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে। সরকার কৃষকদের বোরো ধানের উন্নত বীজ সরবরাহ করছে। সার, সেচসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রণোদনা দিচ্ছে। তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বোরো উৎপাদন নির্বিঘ্ন করার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বোরো আবাদে সঠিকজাত নির্বাচন, কৃষিতাত্তি¡ক ও সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই ও সেচজনিত প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং সম্ভাব্য প্রতিকার ব্যবস্থা বিষয়ে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ও কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্রি ইতোমধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া এবং রাজশাহী অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ১২টি অঞ্চলিক কর্মশালা সম্পন্ন করেছে।


দক্ষিণাঞ্চলের অনাবাদি জমির প্রায় ৩০%। গত তিন বছরে পর্যায়ক্রমে চাষের আওতায় এসেছে। এ বছর আরও এলাকা আবাদের আওতায় আনার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বোরো মওসুমে ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। চলতি বোরো মওসুমে গত বছরের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর জমি বাড়িয়ে ৪৮ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অঞ্চল হিসেবে সিলেটে, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে হাইব্রিড চাষও বাড়ানো হচ্ছে। গত বছর ৯ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড ধান চাষ হয়েছিল। এবার ১১ লাখ হেক্টরে হবে হাইব্রীড ধানের চাষ। এ বছর দুই লাখ হেক্টরে বাড়তি হাইব্রিড জাতের ধান চাষের জন্য ১৫ লাখ কৃষককে মাথাপিছু এক বিঘা জমির জন্য দুই কেজি করে বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এবার বোরো মওসুমে হাইব্রিডসহ দুই কোটি ছয় লাখ টন চাল উৎপাদন হবে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ লক্ষ টন বেশি।


আমাদের দেশের কৃষকরা বোরো আবাদে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তার সম্মুখিন হন। ফলে অনেক সময় কাক্সিক্ষত ফলন পান না। তাই ফলন বাড়াতে এলাকা, মওসুম, জমির ধরন অনুসারে লাগসই জাত নির্বাচন করা জরুরি। ভালো বীজে ভালো ফলন, ভালোবীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ২০% পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব।


জাত নির্বাচনে সতর্কতা
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমি ৩০টি বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে বিভক্ত। ধান এমন একটা ফসল যা দেশের প্রায় সকল পরিবেশ অঞ্চলে চাষাবাদ করা গেলেও কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে এর অভিযোজনশীলতায় কিছুটা তারতম্য রয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষকরা অনেক সময় এলাকাভিত্তি সঠিক জাত নির্ধারণ করতে পারেন না। যেমন- কোন জমিতে ১৫০ দিনের কম জীবনকাল সম্পন্ন জাত ভালো হবে কিন্তু না জানার কারণে সেখানে কৃষকরা ১৫০ দিনের বেশি জীবনকাল সম্পন্ন জাত নির্বাচন করেন। বোরো ধানের দীর্ঘমেয়াদি (>১৫০ দিন) জাতসমূহ হচ্ছে - ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৯, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২। স্বল্পমেয়াদি (<১৫০ দিন) জাতের মধ্যে রয়েছে - ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯৬, ব্রিহাইব্রিড ধান৩ এবং ব্রিহাইব্রিড ধান৫। প্রিমিয়াম কোয়ালিটি জাতগুলো হচ্ছে ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৮১ এবং উচ্চ মাত্রার জিংক (>২৪ পিপিএম) সমৃদ্ধ জাতসমূহ হচ্ছে- ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৪। কৃষি ইকোসিস্টেম ও ভূমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে সঠিকজাত নির্বাচন করতে হবে।


কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা
আদর্শ বীজতলায় চারা তৈরি : অনেক সময় কৃষকরা আদর্শ বীজতলায় চারা করতে চায় না। অনুর্বর জমিতে এবং গাছের ছায়ায় বীজতলা করেন কৃষকরা এবং ফলে চারার গুণগত মান খারাপ হয় এবং পরবর্তীতে  ঐ চারা হতে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় না। আদর্শ বীজতলা হতে সুস্থ সবল চারা হবে এবং কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যাবে এবং বীজের সঠিক হার বজায় থাকে এবং বীজ সাশ্রয় হয়।


সঠিক বয়সের চারা ব্যবহার : কৃষকরা নানান কারণে (সময় মতো সেচের পানি না পাওয়ায়) বেশি বয়সের চারা মাঠে রোপণ করে, ফলে বেশি বয়সের চারা হতে বেশি কুশি হয় না এবং পরবর্তীতে ফলন কমে যায়। বোরো মওসুমে অবশ্যই ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। সঠিক বয়সের চারা রোপণ করলে সর্বোচ্চ কুশির সংখ্যা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া সম্ভব। সাধারণত ১৫ ডিসেম্বর হতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এর পরে রোপণ করলে প্রতিদিনের জন্য ফলন কম হবে।
 

সুষমমাত্রায় সার প্রয়োগ : গাছের বাড়-বাড়তির এবং পর্যাপ্ত কুশি উৎপাদনের জন্য সুষম সার প্রয়োগ করা খুবই জরুরি। কৃষকদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় জমির উর্বরতা বিবেচনা করে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।


ইউরিয়া সার ব্যবহারে সতর্কতা : চারা লাগানোর ৭-১০ দিনের ভেতর একবার এবং ফুল আসার আগে আরেকবার উপরিপ্রয়োগ করেন। কিন্তু কুশি আসা ও কুশি উৎপাদনের সময় সার প্রয়োগ করে না। ফলে কুশির সংখ্যা কমে গিয়ে ফলন কমে যায়। আবার অনেক সময় কাইচ থোড় আসার ৫-১০ দিন আগে যে ইউরিয়া সার দিতে হয় তা না জানার জন্য সঠিক সময়ে প্রয়োগ করে না। ঐ সময়ে সার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐ সময় ইউরিয়া সার দিতে না পারলে ধানের ছড়ায় দানার সংখ্যা কমে যায় এবং ফলন কম হয়। সঠিক সময়ে ইউরিয়া/নাইট্রোজেন সার দেওয়ার ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করে তোলার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। ক্রান্তিকাল (Critical period) সময়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।


সঠিক সময়ে আগাছা দমন : আগাছা সঠিক সময়ে দমন না করলে বোরো মওসুমে প্রায় ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যায়। বোরো মওসুমে চারা লাগানোর পর দুইবার/তিনবার আগাছা পরিষ্কার করতে হয় বা সঠিক আগাছা নাশক প্রয়োগ করে আগাছা দমন করা যায়। বোরো মওসুমে আগাছা দমনের ক্রান্তিকাল (Critical time) হল ৪৫-৫০ দিন। ঐ সময় পর্যন্ত ধানক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে পারলে ফসলের ক্ষতি হবে না। কিন্তু অনেক সময় কৃষকরা সঠিক সময়ে আগাছা দমন না করায় আগাছা ধান গাছের সাথে খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করে ধানের ফলন কমিয়ে দেয়। বোরো মওসুমে চারা লাগানোর অন্তত ৪৫ দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে হবে।


জৈবসারের ব্যবহার বাড়ানো : জমিতে জৈবসার তথা ধৈঞ্চা বা গোবর সার বা ফার্ম ইয়ার্ড সার ব্যবহার করলে অন্যান্য অজৈব সার যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সারের কার্যকারিতা বাড়ে; জমির পানি ধারণক্ষমতাও বাড়ে। জমির ভৌত, জৈবিক ও রাসায়নিক পরিবর্তন এর ফলে পরবর্তীতে ফলন বাড়ে। কিন্তু কৃষকরা প্রায়শই জৈবসারের ব্যবহার করে না। সাধারণত রোপা আমন ধান কাটার পর জমি ১৫-৩০ দিন পতিত থাকে; এসময় ধৈঞ্চা বা অন্যান্য জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া ধান কাটার সময় ২০ সেমি. উচ্চতায় খড় জমিতে রেখে পরবর্তী ফসল চাষের আগে মাটিতে মিশিয়ে দিলে ক্রমান্বয়ে জমিতে জৈবসার ও পটাশের পরিমাণ বাড়ে।


সেচ ব্যবস্থাপনা : দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাবনা, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ কাজ বিঘœ হচ্ছে। হাওড় এলাকার এপ্রিল-মে মাসে কিছু স্থানে ভূপরিস্থ (ছোটনদী, খাড়ি, নালা ইত্যাদি) পানির অভাবে বোরো ফসলের শেষ পর্যায়ে সেচ প্রদানে সম্ভব না হওয়ায় প্রায়শই ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। উপক‚লীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির জন্য এবং উপক‚লীয় অলবণাক্ত এলাকায় সেচ অবকাঠামোর অভাবে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরেন্দ্র এলাকায় সেচসাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পানি সাশ্রয়ী শস্যবিন্যাস প্রচলন করতে হবে। স্বল্প ডিস চার্জের গভীর নলক‚পের ব্যবহার করা যেতে পারে। হাওড় এলাকায় বিদ্যমান ছোটনদী, খাড়ি, নালাসমূহ পুনঃখনন করে ভূপরিস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের সুযোগ থাকলে তা দিয়ে সম্পূরক সেচ প্রদান করে বোরো উৎপাদন সুনিশ্চিত করা যেতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় সরকারি পর্যায়ে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন করা প্রয়োজন।  


অঞ্চলভিত্তিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও প্রতিকার
হাওড় অঞ্চল : হাওড় এলাকায় সঠিকজাত নির্বাচন একটি সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঐ এলাকায় যদি আগাম পানির ঢল আসে সেক্ষেত্রে  দীর্ঘ জীবনকাল জাত যেমন ব্রি ধান২৯, বিআর১৭, বিআর১৮ পরিপক্ব অবস্থায় পানিতে তলিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে  ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯৬ ইত্যাদি ব্যবহার করে আগাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষা পেতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক জাত ব্যবহার করলে  হাওড়ে ফসলহানির ঝুঁকি কমবে। সেক্ষেত্রে ১৫০ দিনের কম জীবনকাল সম্পন্ন জাত ১৫-২১ নভে¤¦র পর্যন্ত বীজবপন করতে হবে এবং ৩০-৩৫ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। ১৫০ দিনের অধিক জীবনকাল সম্পন্ন জাত ১-৭ নভেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করতে হবে এবং ৩৫-৪৫ দিনের চারা রোপণ করতে হবে।


বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর ঠাণ্ডারপ্রবণ এলাকা : এসব এলাকায় অনেক সময় বীজতলা ঠাণ্ডার প্রকোপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চারার গুণগত মান খারাপ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ফলন কমে যায়। এ এলাকায় বেশির ভাগ কৃষকরা বোরো ধানের আগে আলু চাষ করে, যলে বোরো চাষে দেরি হয়ে যায়। ১৫ ফেব্রুয়ারি বা তার পর তারা বোরো ধান রোপণ করে। এ সময় তাদের বীজতলায় চারার বয়স বেড়ে যায় ফলে ফলনে প্রভাব পড়ে। বীজতলায় ৩-৫ সেমি. পানি ধরে রাখতে হবে এবং স¦চ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। দিনের বেলায় বেলা ১০.০০-১১.০০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ঢাকা অংশের ভেতরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে গুণগতমান সম্পন্ন চারা উৎপাদন সম্ভব হয়। শৈত্যপ্রবাহের সময় স্বচ্ছপলিথিন দিয়ে দিন ও রাত উভয় সময় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে, তবে রাতে পলিথিনের কিছুটা অংশ খোলা রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে চারার উপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে পুনরায় নতুন পানি দিতে হবে, তবে এক্ষেত্রে টিউবওয়েলের পানি দিলে ভালো হয়।


দক্ষিণাঞ্চল বা লবণাক্ততা এলাকা : লবণাক্ততা এলাকায় কৃষকরা অনেক সময় স্থানীয় জাত চাষ করে। সেক্ষেত্রে  লবণাক্ততা সহিষ্ণু  ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৯৭, ব্রি ধান৯৯, বিনা ধান৮ ও বিনা ধান১০ চাষ করতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ হতে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে আগাম বীজতলায় বীজ ফেলে আগাম রোপণ করলে কুশি আসার সময় (মার্চ-এপ্রিল) লবণাক্ততাজনিত ক্ষতি থেকে ধানকে রক্ষা সম্ভব। ১৫ নভেম্বর বপন ও  ২৫ ডিসেম্বর রোপণ করতে হবে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতসমূহ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। য়

১মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ২ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৭১৬৫৪০৩৮০, ই-মেইল : smmomin80@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon